Friday, November 23, 2012

DUTI KABITA / Joy Goswami



জয় গোস্বামী 
********
রূপ 
.........
অসম্বৃত অবস্থায় দেখেছে রাত্রিকে 
সূর্য তাই এখন টানে রক্তগাঁজাদম 
সে বলে, ‘মন ঘুরিয়ে দেবো অন্য কারো দিকে-’ 
কিন্তু তার শক্তি বড় কম 

শক্তি কম, স্বাস্থ্য নেই – কোথায় ? কার কোলে 
দগ্ধ এই সূর্য তবে রাখবে পোড়া মাথা ? 
রাত্রি যদি আবারও তার কালো শরীর খোলে 
ফিনকি দিয়ে জ্বলবে সব পাতাঃ  
আগুন, পায়ে আগুন, শিরে আগুন – নিশ্চুপে 
পাতারা ওড়ে রাত্রি ভ’রে, পুরুষ ধ’রে খায় 
কী পাতা কেউ জানে না, শুধু সূর্য তার রূপে 
পাগল হয়ে নদীর জলে মাথা ডোবাতে যায় !  
***************************************     
সংহার 
.................
বগলা আমার জিভ টেনে ছিঁড়ছেন । এই জিভে 
আমি কত পাপ কথা গুপ্ত কথা অপরাধ কথা 
কী স্বপ্নে বলেছি , হায় ! কৃষ্ণরাই সীতারাম লক্ষ্মীনারায়ণ 
দুই মুহূর্তের ফাঁকে এক চক্ষু রেখে 
তোমাদের খোলা দেহ , মানবমানবীরূপে তোমাদের উদ্দাম মিলন 
দেখেছি , দেখিনি শুধু , হেসেছি – হাসিনি শুধু , পৃথিবীর ছাদে 
দশদিন দশরাত নৃত্য ক’রে বেড়িয়েছি – বেড়াইনি কেবল ,
                                           এক চুরমার ক্রোধে
হাওড়ার রাস্তায় আমি , বরাকর ব্রীজে আমি , নারকোলডাঙায় 
ফেলেছি প্রথম লাশ , ফেলেছি দ্বিতীয় লাশ , তিন চার , সহস্র অযুত 
উজ্জ্বল সোহম্ লাশ ফেলে আর ঘাড় ধ’রে এনেছি শিবের    
গদীতে , কৈলাসধামে , উপরে নিদ্রিত মহাদেব 
বাঁ পাশে ঘুমোন দুর্গা , দেয়ালে দেয়ালে দশপ্রহরণ ঝোলে চমৎকার 
কীভাবে আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর , কীভাবে শবের গন্ধে 
                                    বমি হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর , সেই দৃশ্য দেখে  
আহ্লাদে আটখানা আমি , হ্যাঁ আমি মস্তিতে চুর , সত্যি আমি 
                            তুড়িলাফ আনন্দে খেয়েছি আমি সে-ফুর্তির প্রাণে 
গিয়েছি গড়ের মাঠে , আমি ও আমার জিভ গলিতে রাস্তায় পথে পথে 
এই পুণ্য ব্রতকথা প্রচার করেছি এই মদের দোকানে ওই 
                                        টগরের ঘরে সেই অন্ধ জেলকূপে   
মনের আনন্দে আমরা রাত ভোর দিয়েছি কীর্তন , সেই পাপে 
বগলা আমার জিভ উৎপাটন করছেন বগলা আমার 
জিভ টেনে ছিঁড়ছেন বগলা আমার জিভ ছাড়ো মরে যাচ্ছি ওয়াক্ থুঃ – 
ছাড়্ মাগী ডুবে যাচ্ছি , ছাড়্ রক্ত ডুবে রক্ত , হাড় রক্ত পুবে রক্ত 
                                           লাল রক্ত পুবে...আহ্ , মাগো......
জয় গোস্বামী 
রূপ 


অসম্বৃত অবস্থায় দেখেছে রাত্রিকে 
সূর্য তাই এখন টানে রক্তগাঁজাদম
সে বলে, ‘মন ঘুরিয়ে দেবো অন্য কারো দিকে-’
কিন্তু তার শক্তি বড় কম

শক্তি কম, স্বাস্থ্য নেই – কোথায় ? কার কোলে
দগ্ধ এই সূর্য তবে রাখবে পোড়া মাথা ?
রাত্রি যদি আবারও তার কালো শরীর খোলে
ফিনকি দিয়ে জ্বলবে সব পাতাঃ
আগুন, পায়ে আগুন, শিরে আগুন – নিশ্চুপে
পাতারা ওড়ে রাত্রি ভ’রে, পুরুষ ধ’রে খায়
কী পাতা কেউ জানে না, শুধু সূর্য তার রূপে
পাগল হয়ে নদীর জলে মাথা ডোবাতে যায় ! 



সংহার 


বগলা আমার জিভ টেনে ছিঁড়ছেন । এই জিভে
আমি কত পাপ কথা গুপ্ত কথা অপরাধ কথা
কী স্বপ্নে বলেছি , হায় ! কৃষ্ণরাই সীতারাম লক্ষ্মীনারায়ণ
দুই মুহূর্তের ফাঁকে এক চক্ষু রেখে
তোমাদের খোলা দেহ , মানবমানবীরূপে তোমাদের উদ্দাম মিলন
দেখেছি , দেখিনি শুধু , হেসেছি – হাসিনি শুধু , পৃথিবীর ছাদে
দশদিন দশরাত নৃত্য ক’রে বেড়িয়েছি – বেড়াইনি কেবল ,
এক চুরমার ক্রোধে
হাওড়ার রাস্তায় আমি , বরাকর ব্রীজে আমি , নারকোলডাঙায়
ফেলেছি প্রথম লাশ , ফেলেছি দ্বিতীয় লাশ , তিন চার , সহস্র অযুত
উজ্জ্বল সোহম্ লাশ ফেলে আর ঘাড় ধ’রে এনেছি শিবের
গদীতে , কৈলাসধামে , উপরে নিদ্রিত মহাদেব
বাঁ পাশে ঘুমোন দুর্গা , দেয়ালে দেয়ালে দশপ্রহরণ ঝোলে চমৎকার
কীভাবে আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর , কীভাবে শবের গন্ধে
বমি হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর , সেই দৃশ্য দেখে
আহ্লাদে আটখানা আমি , হ্যাঁ আমি মস্তিতে চুর , সত্যি আমি
তুড়িলাফ আনন্দে খেয়েছি আমি সে-ফুর্তির প্রাণে
গিয়েছি গড়ের মাঠে , আমি ও আমার জিভ গলিতে রাস্তায় পথে পথে
এই পুণ্য ব্রতকথা প্রচার করেছি এই মদের দোকানে ওই
টগরের ঘরে সেই অন্ধ জেলকূপে
মনের আনন্দে আমরা রাত ভোর দিয়েছি কীর্তন , সেই পাপে
বগলা আমার জিভ উৎপাটন করছেন বগলা আমার
জিভ টেনে ছিঁড়ছেন বগলা আমার জিভ ছাড়ো মরে যাচ্ছি ওয়াক্ থুঃ –
ছাড়্ মাগী ডুবে যাচ্ছি , ছাড়্ রক্ত ডুবে রক্ত , হাড় রক্ত পুবে রক্ত
লাল রক্ত পুবে...আহ্ , মাগো.....














Thursday, November 8, 2012

KEU KATHA RAKHENI / Sunil Gangopadhyay


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কেউ কথা রাখে নি

কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে নি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠা থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কতো চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো,
কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি

মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিলো, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কতো বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিনপ্রহরের বিল দেখাবে?

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারি নি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায় নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!

বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিলো,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাড়ের চোখে বেঁধেছি লালকাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম
তবু কথা রাখে নি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী

কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না!