Saturday, March 26, 2011

EKGUCHCHHA KABITA / Binay Majumdar

একগুচ্ছ কবিতা 
বিনয় মজুমদার 














আমার শোবার ঘর ছেড়ে


আমার শোবার ঘর ছেড়ে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।
বারান্দার পাশ দিয়ে একটি মুকুট হেঁটে চলে গেল অতিশয় ধীরে,
আমি মনোযোগ দিয়ে তার বস্তাবৃত অঙ্গ দেখলাম।
এ মুকুট প্রৌঢ়া ফলে মুকুটের ফুল দুটি বেশ ঝুলে পড়েছে নিশ্চয়,
আরো এ বয়সে ফুলে অনেক নখের দাগ নিশ্চয় লেগেছে
মুকুট পরার কালে ফুল টেপবার ফলে, তবুও মুকুট তার ফুল
কৌশলে কাঁচুলি দিয়ে বেঁধেছে এমনভাবে যাতে মনে হয় তার ফুল
মোটেই ঝোলে নি আর বারংবার নিয়মিত মুকুট পরার ফলে নিশ্চয় মুকুট
বেশ বড় হয়ে গেছে এই প্রৌঢ় বয়সে ও যদিও অবিবাহিতা আছে।




আমার বাড়ির থেকে


আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি অগণিত যুবতী চলেছে।
এইসব বিবাহিতা এবং অবিবাহিতা যুবতীদিগের প্রত্যেকের
অন্তরে জয়পতাকা কিভাবে থাকে আমি সু ন্দর নিখুঁতভাবে দেখি
তাকিয়ে তাকিয়ে ওরা যখন হাঁটেঁ বা বসে থাকে।
প্রত্যেকটি যুবতীর অন্তরে জয়পতাকা প্রবেশ করেছে বহুবার,
নিজের অন্তরে ঢোকা জয়পতাকাকে খুব ভালবাসে যে কোনো যুবতী।
অনেক জয়পতাকা অন্তরে প্রবেশ করে তার মধ্যে যে জয়পতাকা
অন্তরে আনন্দ দেয় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ
তাকেই বিবাহ করে অনূড়া যুবতীগণ। আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে
প্রতিদিন আমি দেখি অগণিত যুবতী চলেছে।


মুকুট


এখন পাকুড়গাছে সম্পূর্ণ নূতন পাতা, তার সঙ্গে বিবাহিত এই
বটগাছে লাল লাল ফল ফলে আছে।
চারিদিকে চিরকাল আকাশ থাকার কথা, আছে কিনা আমি দেখে নিই।
অনেক শালিক পাখি আসে রোজ এই গাছে, বট ফলগুলি
তারা খুটেঁ খুটেঁ খায় বসন্তের হাওয়া বয়, শালিকের ডাক
এবং পাতার শব্দ মিশে একাকার হয়ে চারদিকে ভাসে।
এখন অনেক মেঘ সোনালি রূপালি কালো আকাশে আকাশে।
একটি মুকুট সেই পাকুড় গাছের নিচে শাড়ি পরে দাড়িয়েঁ রয়েছে।


মদের ফেনার মতো সাদা সাদা দাঁত আমি অনেক দেখেছি।
জেনেছি আগুন যত্ দুরেই হোক না কেন তাকে দেখা যায়।
মুকুরের বুকে ঠাঁই পেতে হলে সরাসরি সম্মুখেই চলে যেতে হয়
পিছনে বা পাশে নয়; গ্রন্থ ছন্দোবদ্ধ হলে তবে আপনিই মনে থাকে
মৃত্যু অবধিই থাকে; মানুষ সমুদ্রকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।




চাঁদের গুহার দিকে


চাঁদের গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, মেঝের উপরে
দাড়িয়ে রয়েছে চাঁদ, প্রকাশ্য দিনের বেলা, স্পষ্ট দেখা যায়
চাঁদের গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, ঘাসগুলো ছোট করে ছাঁটা।
ঘাসের ভিতর দিয়ে দেখা যায় গুহার উপরকার ভাঁজ।
গুহার লুকোনো মুখ থেকে শুরু হয়ে সেই ভাঁজটি এসেছে
বাহিরে পেটের দিকে। চাঁদ হেঁটে এসে যেই বিছানার উপরে দাঁড়াল
অমনি চাঁদকে বলি,' তেল লাগাবে না আজ' শুনে চাঁদ বলে
'মাখব নিশ্চয়, তবে একটু অপেক্ষা কর' বলে সে অয়েল ক্লথ নিয়ে
পেতে দিল বিছানায়, বালিশের কিছু নিচে, তারপর হেঁটে এসে চলে গেল
নিকটে তাকের দিকে,একটি বোতল থেকে বাম হাতে তেল নিয়ে এল
এসে তেল মাখা হাতে ভুট্টাটি চেপে ধরে।
যখন ধরল তার আগেই ভুট্টাটি খাড়া হয়ে গিয়েছিল।
চাঁদ আমি দুজনেই মেঝেতে দাঁড়ানো মুখোমুখি
এক হাতে ঘসে ঘসে ভুট্টার উপরে চাঁদ তেল মেখে দিল।



ভালোবাসা দিতে পারি



ভালোবাসা দিতে পারি তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?
লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝরে যায়-
হাসি, জ্যোৎস্না, ব্যথা, স্মৃতি, অবশিষ্ট কিছুই থাকে না।
এ আমার অভিজ্ঞতা। পরাবতগুলি জ্যোৎস্নায়
কখনো ওড়ে না; তবু ভালোবাসা দিতে পারি আমি।
শাশ্বত, সহজতম এই দান- শুধু অংকুরের
উদ্গমে বাধা না দেওয়া, নিষ্পেষিত অনালোকে রেখে
ফ্যাকাশে হলুদবর্ণ না করে শ্যামল হতে দেওয়া।
এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি
মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালোবেসে ফেলি।
গ্রহণে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচূড়া থেকে
পতন হলেও তুমি আঘাত পাওনা, উড়ে যাবে।
প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চলে যাবে; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হব আমি।


সন্তপ্ত কুসুম ফুটে


সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়।
দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হে তরু,
তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না।


কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি।
নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পঙক্তি আর
মনে নেই গোধূলিতে; ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই।
অথবা গৃহের থেকে ভুল বহির্গত কোনো শিশু
হারিয়ে গিয়েছে পথে, জানে না সে নিজের ঠিকানা।


কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে


কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে সকালে জেগেছি সবিনয়ে।
কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত তোমার প্রতিভা
উদ্ভাসিত করেছিল ভবিষ্যৎ, দিকচক্রবাল।
সময়ে ভেবেছিলাম সম্মিলিত চায়ের ভাবনা,
বায়ুসেবনের কথা, চিরন্তন শিখরের বায়ু।
দৃষ্টিবিভ্রমের মতো কাল্পনিক বলে মনে হয়
তোমাকে অস্তিত্বহীনা, অথবা হয়তো লুপ্ত, মৃত।
অথবা করেছে ত্যাগ, অবৈধ পুত্রের মতো, পথে।
জীবনের কথা ভাবি, ক্ষত সেরে গেলে পরে ত্বকে
পুনরায় কেশোদ্গম হবে না; বিমর্ষ ভাবনায়
রাত্রির মাছির মতো শান্ত হয়ে রয়েছে বেদনা-
হাসপাতালের থেকে ফেরার সময়কার মনে।
মাঝে মাঝে অগোচরে বালকের ঘুমের ভিতরে
প্রস্রাব করার মতো অস্থানে বেদনা ঝরে যাবে।




মুকুরে প্রতিফলিত


মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে |
শিক্ষায়তনের কাছে হে নিশ্চল, স্নিগ্ধ দেবদারু
জিহ্বার উপরে দ্রব লবণের মত কণা-কণা
কী ছড়ায়, কে ছড়ায় ; শোনো, কী অস্ফুট স্বর, শোনো
‘কোথায়, কোথায় তুমি, কোথায় তোমার ডানা, শ্বেত পক্ষীমাতা,
এই যে এখানে জন্ম, একি সেই জনশ্রুত নীড় না মৃত্তিকা?
নীড় না মৃত্তিকা পূর্ণ এ অস্বচ্ছ মৃত্যুময় হিমে…’
তুমি বৃক্ষ, জ্ঞানহীন, মরণের ক্লিষ্ট সমাচার
জানো না, এখন তবে স্বর শোনো,অবহিত হও |


সুস্থ মৃত্তিকার চেয়ে সমুদ্রেরা কত বেশি বিপদসংকুল
তারো বেশি বিপদের নীলিমায় প্রক্ষালিত বিভিন্ন আকাশ,
এ-সত্য জেনেও তবু আমরা তো সাগরে আকাশে
সঞ্চারিত হ’তে চাই, চিরকাল হ’তে অভিলাষী,
সকল প্রকার জ্বরে মাথা ধোয়া আমাদের ভালো লাগে ব’লে |
তবুও কেন যে আজো, হায় হাসি, হায় দেবদারু,
মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়!


আমার আশ্চর্য ফুল


আমার আশ্চর্য ফুল, যেন চকোলেট, নিমিষেই
গলাধঃকরণ তাকে না ক’রে ক্রমশ রস নিয়ে
তৃপ্ত হই, দীর্ঘ তৃষ্ণা ভুলে থাকি আবিষ্কারে, প্রেমে।
অনেক ভেবেছি আমি, অনেক ছোবল নিয়ে প্রাণে
জেনেছি বিদীর্ণ হওয়া কাকে বলে, কাকে বলে নীল-


আকাশের হৃদয়ের; কাকে বলে নির্বিকার পাখি।
অথবা ফড়িঙ তার স্বচ্ছ ডানা মেলে উড়ে যায়।
উড়ে যায় শ্বাস ফেলে যুবকের প্রানের উপরে।
আমি রোগে মুগ্ধ হয়ে দৃশ্য দেখি, দেখি জানালায়
আকাশের লালা ঝরে বাতাসের আশ্রয়ে আশ্রয়ে।
আমি মুগ্ধ; উড়ে গেছ; ফিরে এসো, ফিরে এসো , চাকা,
রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।
আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন
সুর হয়ে লিপ্ত হবো পৃথীবীর সব আকাশে।


আমরা দুজনে মিলে


আমরা দুজনে মিলে জিতে গেছি বহুদিন হলো ।
তোমার গায়ের রঙ এখনো আগের মতো , তবে
তুমি আর হিন্দু নেই, খৃষ্টান হয়েছো ।
তুমি আর আমি কিন্তু দুজনেই বুড়ো হয়ে গেছি ।
আমার মাথার চুল যেরকম ছোটো করে ছেঁটেছি এখন
তোমার মাথার চুলও সেইরূপ ছোটো করে ছাঁটা ,
ছবিতে দেখেছি আমি দৈনিক পত্রিকাতেই ; যখন দুজনে
যুবতী ও যুবক ছিলাম
তখন কি জানতাম বুড়ো হয়ে যাব ?
আশা করি বর্তমানে তোমার সন্তান নাতি ইত্যাদি হয়েছে ।
আমার ঠিকানা আছে তোমার বাড়িতে ,
তোমার ঠিকানা আছে আমার বাড়িতে ,
চিঠি লিখব না ।


আমরা একত্রে আছি বইয়ের পাতায় ।

আমাকেও মনে রেখো



পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদ এরা জ্যোতিস্ক এবং
আকাশের তারাদের কাছে চলে যাবো ।
আমাকে ও মনে রেখো পৃথিবীর লোক
আমি খুব বেশী দেশে থাকি নি কখনো ।
আসলে তিনটি মাত্র দেশে আমি থেকেছি, এখন
আমি থাকি বঙ্গদেশে,আমাকেও মনে রেখো বঙ্গদেশ তুমি ।


আমার বাড়ির থেকে


আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি অগণিত যুবতী চলেছে।
এইসব বিবাহিতা এবং অবিবাহিতা যুবতীদিগের প্রত্যেকের
অন্তরে জয়পতাকা কিভাবে থাকে আমি সু ন্দর নিখুঁতভাবে দেখি
তাকিয়ে তাকিয়ে ওরা যখন হাঁটেঁ বা বসে থাকে।
প্রত্যেকটি যুবতীর অন্তরে জয়পতাকা প্রবেশ করেছে বহুবার,
নিজের অন্তরে ঢোকা জয়পতাকাকে খুব ভালবাসে যে কোনো যুবতী।
অনেক জয়পতাকা অন্তরে প্রবেশ করে তার মধ্যে যে জয়পতাকা
অন্তরে আনন্দ দেয় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ
তাকেই বিবাহ করে অনূড়া যুবতীগণ। আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে
প্রতিদিন আমি দেখি অগণিত যুবতী চলেছে।


আমিই তো চিকিৎসক


আমিই তো চিকিৎসক, ভ্রান্তিপূর্ণ চিকিৎসায় তার
মৃত্যু হলে কি প্রকার ব্যাহত আড়ষ্ট হয়ে আছি।
আবর্তনকালে সেই শবের সহিত দেখা হয়;
তখন হৃদয়ে এক চিরন্তন রৌদ্র জ্বলে ওঠে।
অথচ শবের সঙ্গে কথা বলা স্বাভাবিক কিনা
ভেবে-ভেবে দিন যায়; চোখাচুখি হলে লজ্জা ভয়ে
দ্রুত অন্য দিকে যাই; কুক্কুপিন্ট ফুলের ভিতরে
জ্বরাক্রান্ত মানুষের মত তাপ; সেই ফল খুঁজি।


এরূপ বিরহ ভালো


এরূপ বিরহ ভালো ; কবিতার প্রথম পাঠের
পরবর্তীকাল যদি নিদ্রিতের মতো থাকা যায়,
স্বপ্নাচ্ছন্ন, কাল্পনিক ; দীর্ঘকাল পরে পুনরায়
পাঠের সময় যদি শাশ্বত ফুলের মতো স্মিত,
রূপ, ঘ্রাণ, ঝ’রে পড়ে তাহলে সার্থক সব ব্যথা,
সকল বিরহ, স্বপ্ন ; মদিরার বুদ্বুদের মতো
মৃদু শব্দে সমাচ্ছন্ন, কবিতা, তোমার অপ্রণয়।
হাসির মতন তুমি মিলিয়ে গিয়েছো সিন্ধুপারে।
এখন অপেক্ষা করি, বালিকাকে বিদায় দেবার
বহু পরে পুনরায় দর্শনের অপেক্ষার মতো--
হয়তো সর্বস্ব তার ভ’রে গেছে চমকে চমকে।
অভিভূত প্রত্যাশায় এরূপ বিরহব্যথা ভালো।


কুঁড়ি


পদ্মপাতার প’রে জল টলমল করে;
কাছে কোনো ফুল তো দেখিনা,
সাধ জাগে, – বড়ো সাধ জাগে -
ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলে নিচে
আকাশের অভিমুখী উন্মুখ কুঁড়ি আছে কিনা।
হয়তো সে কুঁড়ি
ফোটবার ইচ্ছায় থেকে থেকে – থেকে থেকে
কোন কালে হয়ে গেছে বুড়ি;
কোন কালে তার সব রূপ গেছে প’চে;
হয়তো বা তার আর নেই কোন লেশ।
সাধ জাগে, বড়ো সাধ জাগে-
ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলে নিচে
এখনো রয়েছে কিনা কোন অবশেষ।


ঘুমোবার আগে


তপ্ত লৌহদণ্ড জল ডোবাতে এবং সেই জল খেত নরনারীগণ,
তার ফলে মানুষের রক্তাল্পতা দুর্বলতা জনিত অসুখ সেরে যেত।
এইভাবে এককালে বাঁচতাম মানুষেরা এই পৃথিবীতে।


তবে সবই ঠিক আছে, ঘুমোবার আগে মনে পড়ে সারা দিনের ঘটনা।
মাঝরাতে বিছানায় চাঁদের জ্যোৎস্না এসে পড়ে দূর থেকে।
শুধু চাঁদ দেখবার জন্য আমি বিছানায় উঠে বসি, চাঁদ আছে বলে
ঘুমোতে বিলম্ব হয়। আমি তাড়াতাড়ি ফের যাব।


সন্তপ্ত কুসুম ফুটে


সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়।
দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হে তরু,
তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না।


কে ক্থোয় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি।
নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পঙক্তি আর
মনে নেই গোধূলিতে; ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই।
অথবা গৃহের থেকে ভুল বহির্গত কোনো শিশু
হারিয়ে গিয়েছে পথে, জানে না সে নিজের ঠিকানা।


তুমি যেন ফিরে


তুমি যেন ফিরে এসে পুনরায় কুণ্ঠিত শিশুকে
করাঘাত ক’রে ক’রে ঘুম পাড়াবার সাধ ক’রে
আড়ালে যেও না ; আমি এত দিনে চিনেছি কেবল
অপার ক্ষমতাময়ী হাত দুটি, ক্ষিপ্র হাত দুটি—
ক্ষণিক নিস্তারলাভে একা একা ব্যর্থ বারিপাত |
কবিতা সমাপ্ত হতে দেবে নাকি? সার্থক চক্রের
আশায় শেষের পঙক্তি ভেবে ভেবে নিদ্রা চ’লে গেছে |
কেবলি কবোষ্ণ চিন্তা, রস এসে চাপ দিতে থাকে |
তারা যেন কুসুমের অভ্যন্তরে মধুর ঈর্ষিত
স্থান চায়, মালিকায় গাঁথা হয়ে ঘ্রাণ দিতে চায় |
কবিতা সমাপ্ত হতে দাও, নারী, ক্রমে—ক্রমাগত
ছন্দিত ঘর্ষণে, দ্যাখ, উত্তেজনা শির্ষ লাভ করে,
আমাদের চিন্তাপাত, কসপাত ঘটে, শান্তি নামে |
আড়ালে যেও না যেন, ঘুম পাড়াবার সাধ ক’রে |


কবিতা বুঝিনি আমি

কবিতা বুঝিনি আমি ; অন্ধকারে একটি জোনাকি
যত্সামান্য আলো দেয়, নিরুত্তাপ, কোমল আলোক |
এই অন্ধকারে এই দৃষ্টিগম্য আকাশের পারে
অধিক নীলাভ সেই প্রকৃত আকাশ প’ড়ে আছে—
এই বোধ সুগভীরে কখন আকৃষ্ট ক’রে নিয়ে
যুগ যুগ আমাদের অগ্রসর হয়ে যেতে বলে,
তারকা, জোনাকি—সব ; লম্বিত গভীর হয়ে গেলে
না-দেখা গহ্বর যেন অন্ধকার হৃদয় অবধি
পথ ক’রে দিতে পারে ; প্রচেষ্টায় প্রচেষ্টায় ; যেন
অমল আয়ত্তাধীন অবশেষে ক’রে দিতে পারে
অধরা জ্যোত্স্নাকে ; তাকে উদগ্রীব মুষ্টিতে ধ’রে নিয়ে
বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশের, অন্তরের সার পেতে পারি |
এই অজ্ঞানতা এই কবিতায়, রক্তে মিশে আছে
মৃদু লবণের মতো, প্রশান্তির আহ্বানের মতো |


করবী তরুতে


করবী তরুতে সেই আকাঙ্ক্ষিত গোলাপ ফোটে নি |
এই শোকে ক্ষিপ্ত আমি ; নাকি ভ্রান্তি হয়েছে কোথাও?
অবশ্য অপর কেউ, মনে হয়, মুগ্ধ হয়েছিল,
সন্ধানপর্বেও দীর্ঘ, নির্নিমেষ জ্যোৎস্না দিয়ে গেছে |
আমার নিদ্রার মাঝে, স্তন্যপান করার মতন
ব্যবহার ক’রে বলেশিহরিত হৃদয়ে জেগেছি |
হায় রে বাসি না ভালো, তবু এও ধন্য সার্থকতা,
এই অভাবিত শান্তি, মূল্যায়ন, ক্ষিপ্ত শোকে ছায়া |
তা না হ’লে আস্বাদিত না হবার বেদনায় মদ,
হৃদয় উন্মাদ হয়, মাংসে করে আশ্রয়-সন্ধান |
অখচ সুদূর এক নারী শুধু মাংস ভোজনের
লোভে কারো কাছে তার চিরন্তন দ্বার খুলেছিলো,
যথাকালে লবণের বিস্বাদ অভাবে ক্লিষ্ট সেও |
এই পরিনাম কেউ চাই না, হে মুগ্ধ প্রীতিধারা,
গলিত আগ্রহে তাই লবণ অর্থাৎ জ্যোৎস্নাকামী |


কবিতাগুলো type করেছেন কবি তুহিন দাস,আমরা কৃতজ্ঞ্